‘কের (কিসের) খানি, কের আমোদ, কের ফুর্তি। বাচ্চাকাচ্চা লইয়া ঈদ করছি আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যার পানি ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। কেউ এখনো খোঁজ নিলো না। আমরা কি বাংলাদেশের নাগরিক না? আমরা কি বাংলাদেশের ভোটার না? আমরার কেনে কেউ খবর লইত (নেয়) না?’
বেশ আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুলতানপুরের নার্গিস বেগম। তিন সন্তানের জননী নার্গিস বেগমের স্বামী হূদরোগে আক্রান্ত। অসুখের কারণে স্বামী কাজ করতে না পারায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি।
বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে নার্গিসের পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থলটুকু। পানি নেমে গেলেও এখনো সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রিত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। কাজ করে পেটের খাবার জোগানো যেখানে দায়, সেখানে সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো নার্গিসের একার পক্ষে সম্ভব না।
১৬ জুনের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত সুনামগঞ্জের হাওর-শহর সর্বত্র এখন একই অবস্থা। যেখানে খেয়ে-পরে টিকে থাকাই কষ্টের, সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা পাহাড় সমান পীড়া দিচ্ছে বানভাসিদের।
তারপরও মানুষ চেষ্টা করছে ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু এবারের বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে যেন পরিত্রাণ পাচ্ছেন না তারা। সুনামগঞ্জের বন্যার এক মাস পার হয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতি যেন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ঘরহারা মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্র ও সড়কে অবস্থান করছে। বন্যায় ভেঙে গেছে বেশির ভাগ কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি।
পানির তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ক্ষতির মুখে পড়েছে ইটের দেয়ালে গড়া বাড়িও। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে ঘর থেকে মানুষ কোনোমতে জান নিয়ে বের হতে পারলেও সঙ্গে কিছুই আনতে পারেনি।
পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বন্যায় সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব হাজার হাজার মানুষ। যেখানে ঠিকমতো একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছেন না, সেখানে বাড়িঘর মেরামত করা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে
0 মন্তব্যসমূহ