দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে আক্রান্ত এলাকায় এক লাখ দুই হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে জেলা পর্যায়ে নতুন পাঠ্যবই সরবরাহ করা হবে। এর বাইরে আরও চাহিদা এলে তাদেরও পাঠ্যবই দেয়া হবে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং ৪৫ দিন পর নভেম্বরের প্রথমভাগে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় অনেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তক নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সিলেটসহ অন্যান্য জেলায় এক লাখ দুই হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর তালিকা পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম-নশম শ্রেণি ও ভোকেশনালে সিলেটে ১৪ হাজার ৭৭৯ ও সুনামগঞ্জে ৪২ হাজার ৭৫৫ সেট, এসএসসি ও দাখিলে ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের সিলেটে ৬৮২ ও সুনামগঞ্জে ১০ হাজার ৫৮৬ সেট, ইবতেদায়ি ও দাখিলে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সিলেটে ১০ হাজার ১৪০ ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৫৫৮ সেট বই বিতরণ করা হবে। সে হিসেবে সিলেটে মোট ২৫ হাজার ৬১০ ও সুনামগঞ্জে ৭৬ হাজার ৮৯৯ সেট বই পাঠানো হবে।
মন্ত্রী বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের উল্লিখিত পাঠ্যপুস্তকসহ কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং নরসিংদী জেলার ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে এসব বই পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর অতিরিক্ত চাহিদা থাকলে এনসিটিবির গুদাম (বাফা) থেকে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হবে।
এসএসসি পরীক্ষা শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর : বন্যা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হওয়া চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি নতুন এ তারিখ ঘোষণা করেন। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল গত ১৯ জুন, কিন্তু দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় স্থগিত করা হয় এ পরীক্ষা।
এবারের পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা থেকে কমিয়ে দুই ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে প্রশ্নপত্রের এমসিকিউ অংশের জন্য ২০ মিনিট এবং সৃজনশীল অংশের জন্য এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট নির্ধারিত থাকবে। এ বছর ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা।
এর মধ্যে ৯টি সাধারণ বোর্ডে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১, দাখিলে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ ও কারিগরিতে এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। গত বছর পরীক্ষার্থী
ছিল ২২ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৪ জন।
এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে প্রায় সোয়া দুই লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এখনো নেয়া সম্ভব হয়নি।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া গেলেও এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয় সরকার। নভেম্বরের প্রথমভাগে এইচএসসি পরীক্ষা : চলতি বছরের নভেম্বরের প্রথমভাগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আশার কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, সাধারণত আমাদের দুই পরীক্ষার মাঝে দুই মাস সময় দরকার হয়। আমরা যেহেতু এসএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে নেবো, দুমাস গেলে অক্টোবর নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়।
বোর্ডগুলো একটু বেশি কষ্ট করতে হবে, তারা চেষ্টা করবেন ৪৫ দিন পর। এসএসসি শুরুর ৪৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা নভেম্বরের গোড়ায় শুরু করতে পারব। দীপু মনি বলেন, শিখন ঘাটতি নিরূপণ করবার চেষ্টা করছি। সেই গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে এবং এনসিটিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা আগামী বুধবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে সুনির্দিষ্টভাবে কর্মপরিকল্পনা অর্থাৎ কোন শ্রেণিতে কতগুলো রেমিডিয়াল ক্লাস করাব, কীভাবে অনলাইনে না কীভাবে করাব তারা এ সপ্তাহের মধ্যে দিলে আমরা শুরু করতে পারব।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করা হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় শিক্ষাঙ্গনে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে এক মাস। ২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনগুলো আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।
২ মার্চ শুরু হয় প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস। টানা দুই বছর বন্ধের পর ১৫ মার্চ প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দুই দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনের দুয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী প্রমুখ।
0 মন্তব্যসমূহ