বাংলাদেশে বছরে পাঁচ হাজার শিশু বাঁকা পা (ক্লাবফুট) সমস্যা নিয়ে জন্ম নিচ্ছেন। তবে এটি এখন আর কোনো সমস্যা নয়। অভিভাবকরা একটু সচেতন থাকলে সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে বাঁকা পায়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব পনসেটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। গত চৌদ্দ বছরে ওয়াক ফর লাইফ সফলতার সঙ্গে দেশে ৩০ হাজারের বেশি ক্লাবফুট শিশুকে চিকিৎসার আওতায় এনেছে। যাদের বেশির ভাগই চিকিৎসায় ক্লাবফুটমুক্ত হয়েছে।
রোববার (৫ জুন) দুপুরে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা। দাতা সংস্থা মিরাকেল ফিট ও অ্যাকশন অন পোভার্টির সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দি গ্ল্যানকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত বাংলাদেশ ক্লাবফুট প্রকল্পের ওয়াক ফর লাইফ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স অ্যান্ড ট্রমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শরীফুল হক শরীফ, সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, রংপুর সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন সরকার, দ্য গ্ল্যানকো ফাউন্ডেশন ও ওয়াক ফর লাইফের ফিজিওথেরাপিস্ট নজরুল ইসলাম নাঈম, দ্য গ্ল্যানকো ফাউন্ডেশন ও ওয়াক ফর লাইফের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান রনি, পরশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আতিয়ার রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশে শিশুদের প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্পের মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করছে। দ্য গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত চৌদ্দ বছরে দেশে মোট ৩০ হাজার ৫০০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুই চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্য পেয়েছে।
ফিজিওথেরাপিস্ট নজরুল ইসলাম নাঈম জানান, রংপুরে সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার হতদরিদ্র ক্লাবফুট রোগীদের বিনামূল্যে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়। রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সেবামূলক এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হয়েছে। মুগুর পা (ক্লাবফুট) বিশিষ্ট শিশুদের হতদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ সেবা কার্যক্রম চালু হয়। এরপর স্থান পরিবর্তন করে ২০১৫ সাল থেকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে ক্লাবফুট শিশুদের অভিভাবকরা প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের অফিস কক্ষে যোগাযোগ করতে পারবেন।
আলোচনা শেষে দিবস উদযাপনে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন অতিথিরা। পরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এএনসিপির আর্থিক সহায়তায় ক্লাবফুট আক্রান্ত হতদরিদ্র শিশুদের পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, ক্লাবফুট বা মুগুর পা কিংবা বাঁকা পায়ের পাতা (talipes equinovarus নামেও ডাকা হয়) শিশুর এক ধরনের জন্মগত ত্রুটি। জন্মগত ত্রুটি শিশুর শরীরের এক ধরনের সমস্যা যা শিশুর জন্মের সময় থেকেই দেখা যায়। এই ত্রুটি শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যকলাপে সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে প্রভাব ফেলে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের দ্য গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ